রাগ মানুষের সহজাত আবেগ। তবে মাত্রাতিরিক্ত রাগ শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। হঠাৎ রেগে গেলে হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হতে পারে। আসুন অতিরিক্ত রাগ কীভাবে আমাদের শারীরিক ক্ষতি করে, জেনে নিই–
হার্টের ওপর প্রভাব
হঠাৎ রেগে গেলে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের মতো স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ হয়। এগুলো দ্রুত রক্তনালিকে সংকুচিত করে, বাধাপ্রাপ্ত হয় রক্তপ্রবাহ। এ কারণে দ্রুত শ্বাস ও রক্তচাপ বেড়ে যায়, হার্টের ওপর চাপ পড়ে, হৃৎস্পন্দন এলোমেলো হয়ে যায়। হার্টে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়। দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত রাগ স্থায়ীভাবে ধমনি সংকুচিত করে ফেলে। ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায় দশ গুণ। গবেষণায় দেখা যায়, রাগী মানুষের রিকভারি রেট বা আরোগ্যের হার হয় অনেক মন্থর।
স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে
রাগ ও মানসিক চাপ রক্তনালিতে প্লাটিলেট একসঙ্গে হয়ে জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে
অতিরিক্ত রেগে গেলে নার্ভের ওপর চাপ পড়ে, যা রক্তনালি প্রদাহের জন্য দায়ী কিছু রাসায়নিক পদার্থ, যেমন ইন্টারলিউকিন-৬ নিঃসরণ করে, যা রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়। নিজের অজান্তেই শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে ফেলে রাগী মানুষ।
পেটের সমস্যা
অতিরিক্ত রাগের কারণে স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণে রক্ত চলাচল পেটের অন্ত্র ও মাংসপেশির চেয়ে মস্তিষ্কে বেশি হয়। পেটের রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন সমস্যা, যেমন পেটব্যথা, পেট খারাপ, ডায়রিয়া হয়। আইবিডির বড় একটি কারণ এই অতিরিক্ত রাগ বা স্ট্রেস।
মানসিক স্বাস্থ্য
রাগের কারণে কোনো কিছুতে মনোযোগ দেওয়া যায় না। আবার এই কারণে অন্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, তর্কাতর্কি, অনেক সময় মারামারির মতো ঘটনাও ঘটে। ফলে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এর থেকে মানসিক বিষাদ, অবসন্নতা, অনিদ্রা এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়ে যায়।
বদভ্যাস তৈরি হওয়া
অনেকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কিছু বদভ্যাস তৈরি করে ফেলে, যেমন ধূমপান, মদ্যপান, বেশি খাবার খেয়ে ফেলা। এগুলো পরে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগের কারণ হয়ে ওঠে।
দুর্ঘটনার ভয়
অতিরিক্ত রেগে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি থাকে। কারণ, এ সময় চালক মনোযোগ রাখতে পারেন না। আবার অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাতে থাকেন। অতিরিক্ত রাগ মানুষের আয়ু কমিয়ে দেয়।
তাই শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকতে হলে রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। চেষ্টা করুন হাসিখুশি থাকতে।