জেন-জি’রা কর্মক্ষেত্রে যেমন 

নব্বই দশকের শেষভাগ থেকে ২০১০ এর দশকের প্রথম দিকের যারা তাদের বলা হয় জেনারেশন জেড বা জেন-জি। এই প্রজন্মের তরুণদের জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। এর আগের প্রজন্ম অর্থাৎ মিলেনিয়ালদের মধ্যে পূর্বসূরিদের কিছু প্রথাগত বৈশিষ্ট্য রয়েই গেছে। কিন্তু মিলেনিয়াল আর জেন জির মধ্যে বৈশিষ্ট্যে তো মিল নেই-ই, বরং ব্যবধান অনেক বেশি।

কর্মক্ষেত্রগুলোয় ইতোমধ্যে প্রবেশ করেছে এই প্রজন্মের তরুণরা, সময়ের সঙ্গে যে অংশগ্রহণ আরও বাড়বে। জেন-জির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এখন থেকেই তাই কর্মক্ষেত্রগুলোর উচিত এই প্রজন্ম সম্পর্কে জানাশোনা বাড়ানো, তাদের বোঝার চেষ্টা করা। জেনজিকে কর্মক্ষেত্রে স্বাগত জানানোর এই চর্চাটিকেই গুরুত্ব দেওয়া দরকার। 

টেক-স্যাভি বা দারুণ প্রযুক্তি-বান্ধব
সবচেয়ে প্রযুক্তি-বান্ধব প্রজন্ম হিসেবে তারা খুব সহজেই বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং এই দক্ষতা খুব সহজেই কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে।

কাজের ধরণ
জেন-জি যেন কঠোর নিয়মানুবর্তিতার উল্টোদিকে হাঁটে। বরং তাদের পছন্দ তুলনামূলক নমনীয়-সহনীয় কাজের পরিবেশ। তারা এমন পদ্ধতিতে কাজ করতে ভালোবাসে যেখানে তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা যায় এবং তারা যেন তাদের সেরাটা সেখানে দিতে পারে। 

কাজের পরিবেশ যেমন হবে
জেন-জির তরুণরা কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পছন্দ করে। সে কারণেই দৈনন্দিন রুটিনে নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায়। তারা চায় কাজের পরিবেশ হবে নমনীয়। তার ব্যক্তিগত জীবনকে প্রভাবিত যাতে না করে।  জীবন সম্পর্কে শিথিল দৃষ্টিভঙ্গি দেখে হতবাক হলে হবে না। জেন-জির তরুণরা অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং যেখানেই থাকুক না কেন তারা সেখানে একটি ইতিবাচক আবহ তৈরি করে নিতে সবসময় প্রস্তুত। পাশাপাশি তারা সবসময় নতুন কিছু শিখতে চায়, দক্ষতা বাড়াতে চায়, এমন সুযোগ চায় যেখানে তারা নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।

যোগাযোগ বাড়াতে
প্রথাগত যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন ইমেইল বা টেলিফোনের চেয়ে জেন-জির পছন্দ ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপসহ ডিজিটাল যোগাযোগের অন্যান্য পদ্ধতি। এটাও প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের সম্পর্কেরই বহিঃপ্রকাশ। স্ল্যাক, মাইক্রোসফট টিমস ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে খুব সহজেই তারা সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করতে পারে। 

ব্যবধান কমাবেন যেভাবে
জীবন সম্পর্কে জেন-জির যে অনন্য ধারণা আছে, তা হয়তো কর্মক্ষেত্রে কিছুটা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। পরিবর্তন করতে গেলে কিছু বাধা আসবেই, আবার কর্মক্ষেত্রে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখেও তাদের পড়তে হতে পারে। জেনজির সঙ্গে যোগাযোগের দূরত্ব পূরণে কর্মক্ষেত্রেই সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে। দুই পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা ও বোঝাপড়ার অনুভূতি সৃষ্টি হয়, এমন কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে উদার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে জেন-জিকে নির্বিঘ্নে মিশে যাওয়ার সুযোগ দিতে হলে সেখানে অন্তর্ভুক্তির সংস্কৃতি এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে উদার হতে হবে, এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে যেকোনো বয়সের মানুষের কাজকে মূল্যায়ন করা হবে, যোগ্যতার স্বীকৃতি দিতে হবে, কাজের প্রশংসা করতে হবে।

দলগত কাজ করার প্রক্রিয়া
বিভিন্ন টিম-বিল্ডিং অ্যাকটিভিটি বা দলগতভাবে করা যায় এমন কাজের ব্যবস্থা করতে হবে, যেখানে বয়স্ক ও তরুণরা একসঙ্গে মিলে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে কাজ করবেন। এজন্য কর্মশালা বা কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের আয়োজন করা যেতে পারে। এর ফলে কেবল যে তাদের প্রজন্মের বাইরে গিয়ে দলগত কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে তা-ই নয়, বরং স্টেরিওটাইপ বা কারও সম্পর্কে কাঠামোবদ্ধ ধারণা ভেঙে দেবে এবং সহানুভূতি তৈরি করবে।  কর্মক্ষেত্রগুলো যত বিকশিত হবে, যত গতিশীল হয়ে উঠবে, প্রতিষ্ঠানকে তত বেশি পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে শিখতে হবে। যদি ইতিহাস থেকে আমরা কিছু শিখে থাকি, তাহলে প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই উন্নয়নের জন্য জেন-জির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ হলো জেন-জি, তাই আমাদের এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেন তারা কাজের ক্ষেত্রে যথাযথ সুবিধা পায় এবং কর্মক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে।

Related Posts

অতিরিক্ত রাগে শারীরিক কী ক্ষতি হতে পারে
  • October 23, 2024

রাগ মানুষের সহজাত আবেগ। তবে মাত্রাতিরিক্ত রাগ শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। হঠাৎ রেগে গেলে হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হতে পারে। আসুন অতিরিক্ত রাগ কীভাবে আমাদের শারীরিক

Read more
যেনে নেন লেবু–পানি কখন খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন
  • September 20, 2024

স্বাস্থ্যসচেতনদের পছন্দের পানীয় হিসেবে বরাবরই জনপ্রিয় লেবু–পানি। দিনের শুরু থেকে শুরু করে খাওয়ার আগে-পরে, এক গ্লাস লেবু–পানি খাওয়া অনেকেরই রোজকার রুটিনের অংশ। যেকোনো সময় লেবু–পানি খেলেই যে সমান উপকারিতা মেলে, ব্যাপারটা এমন নয়। বরং সময়ভেদে বদলে যায় লেবু–পানির উপকারিতা। আবার

Read more

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *