মঙ্গলবার রাতজুড়ে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ১৮১টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরানের সেনাবাহিনীর এলিট শাখা ইরান রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্রই অবশ্য লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
তবে কয়েকটি ধ্বংস করা যায়নি। সেসব ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর এলাকায় একজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন দু’জন ইসরাইলি। আইডিএফ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ইসরাইলের দৈনিক টাইমস অব ইসরায়েল এবং এএফপি।
ইরানের এই ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সেগুলো আকাশেই ধ্বংস করার প্রক্রিয়া চলতে থাকায় রাতব্যাপী শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠেছে পুরো এলাকা। জেরুজালেম থেকে জর্ডান পর্যন্ত শোনা গেছে শব্দ। রাতের আকাশ আলোকিত হয়ে উঠেছিল একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের জেরে। হামলার আঘাত থেকে বাঁচতে ওই রাতের মধ্যেই ইসরায়েলের বিভিন্ন বোমা সুরক্ষা কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ১ কোটি মানুষ। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদক, যাদেরকে সে সময় সংবাদ সংগ্রহের জন্য বাইরে লাইভ কাজ করতে হয়েছে, তারাও বোমা সতর্কতার জন্য মাটিতে শুয়ে লাইভ দিয়েছেন।
ইরানের রেভোল্যুশনারি গার্ডের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের ৩টি সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে মঙ্গলবার রাতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে আইআরজিসি। ইরানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নিজে এই হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে খামেনি গোপন নিরাপদ স্থানে রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
এদিকে ইরান হামলা শুরু করার পর যুদ্ধাকালীন মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। বৈঠক শেষে এক বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘ইরান অনেক বড় ভুল করেছে’ এবং এই ভুলের জন্য ইরানকে ‘মূল্য দিতে হবে।’ ইরানে হামলা চালানোর হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইসরায়েল তার ভূখণ্ড এবং জনগণকে রক্ষা করতে কী পরিমাণ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সে সম্পর্কে ইরানের ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীর কোনো ধারণা নেই। এই ধারণা (হামাস নেতা) সিনওয়ার এবং (মোহাম্মদ) দেইফের ছিলো না, (হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা) নাসরুল্লাহ এবং (হিজবুল্লাহর চিফ অব স্টাফ) ফুয়াদ শোকরের ছিলো না। তাদের বোঝা উচিত ছিল যে আমাদের ওপর কেউ হামলা করলে আমরা কোনো ছাড় দিই না।
“অজ্ঞাতার মূল্য যেভাবে তাদের দিতে হয়েছে, ইরানকেও সেভাবেই দিতে হবে।”
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহ থেকে লেবাননে ইরানের সমর্থনপুষ্ট ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বিমান অভিযান শুরু করেছে ইসরাইল। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে স্থল বাহিনীর অভিযান। সেই অভিযানের জবাব হিসেবে ইরান গতকাল রাতের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।